
নোমান মাহমুদ : গরীবদেরকে নিয়ে সবাই রাজনীতি করে। গরীবের কল্যাণ কিংবা উপকার না করে কিভাবে নিজেকে জাহির করা যায়, কিভাবে সেলফি তুলে সেলিব্রেটি হওয়া যায়, তা নিয়েই ব্যস্ত তথাকথিত মানবতা দরদীগণ।
সম্প্রতি একজন কৃষক তার পাকা ধানে আগুন দেয়ার পর হইচই শুরু হয় গোটা দেশে। শুরু হয়ে যায় ধান্ধাবাজির রাজনীতি। কেউ কেউ হাতে মাইক নিয়ে লম্বা বক্তব্য আর পত্রিকায় রঙিন ছবি দেয়া শুরু করলেন; কেউ কেউ গলা ফাটিয়ে বজ্রকন্ঠের নেতা হয়ে গেলেন।
এখানেই শেষ নয়; কেউ কেউ হাতে কাচি নিয়ে সাদা ধুতি পরে, কেউবা প্যান্ট-টাই পরে, কেউবা পুলিশের ড্রেস-বন্দুক নিয়ে নব্য কৃষক সেজে মাঠে। কাচি আর ধুতির সাথে দামী ডিএসএলআর কিংবা আইফোন নিতেও উনারা ভুল করেন নি। ব্যাশ, এক কাচি ধান কাটতে দশ-বারোটা ক্লিক। ছবি তোলার জন্য কাচা নাকি পাকা ধান কাটছেন তাও দেখার ফুসরত নেই।
আপনাদের নাটক দেখার সময় কৃষকের নেই; ওরা চেয়েছে ধানের মূল্য, ওরা চায়নি আপাদের কৃত্রিম সহানুভুতি কিংবা সেলফিবাজি। সঠিক মূল্য দিন, দেখবেন- যারা রোপন করেছে তাদের কাটতে আনন্দের সীমা থাকবে না। লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমি ওরাই রোপন করে আবার ওরাই কাটে।
তবুও আপনাদের এই নব্য কৃষক হওয়ার সহানুভুতি আমি মেনে নিলাম। স্যালুট আপনাদেরকে কিন্তু আমাকে জানাবেন কি- কত কাচি ধান আপনি কেটে দিলেন? আপানার কাটা ধানের গাছে কি এক কেজি চাল হবে? যদি তাই হয় তবে আপনাকে হাজারো স্যালুট নয়তো শতাব্দীর ধিক্কার!!!!
এরা না হয় এক/দুই কাচি ধান কেটে সহানুভুতি দেখালেন কিন্তু যারা কল্যাণ ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র কায়েমের চিন্তায় বিভুর তারা কি করলেন? পত্রিকার ক্রোকোডাইল টিয়ার’স-এর মত বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে রাজধানীর ধনাঢ্য হোটেলগুলোতে ইফতার পার্টি নিয়ে ব্যস্ত। কারণ ঈদের পরে নাকি উনারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য জোটগত আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়বেন। আর যদি সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন (দিবাস্বপ্ন) দিয়ে দেয়, তবে উনারাই এসব আগুনে জ্বলে অঙ্গার হওয়া কৃষকের দুয়ারে দুয়ারে যাবেন।
সত্যি সত্যি দুয়ারে যাবার সুযোগ পেলে কৃষকরা এসব নেতাদের জন্য দরজার কপাট খুলবে কিনা সন্দেহ। আজ যদি সত্যিকার অর্থে কৃষকদের পাশে উনারা দাড়াতে পারতেন, তবে কৃষকরা শুধু দরজার কপাট নয়, ঘাম ঝরা বুকে টেনে নিতো এইসব রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবীদের।
বেশি কিছু নয়, প্রতিটি ইউনিয়নে শুধুমাত্র ২০/৫০জনের একটি টিম গঠন করে ৩ (তিন) দিনের “ধান কাটা” কর্মসূচী দিলেই হতো।
দেখতেন কৃষকরা আনন্দে আত্মহারা হতো; বুকে টেনে নিতো; নিজের টিফিনের সিদল শুটকি দিয়ে জমিনের আইলে বসে ভাতও খাওয়াতো; কারণ গ্রামের ঐ কৃষকরা জানে; এরা সত্যি সত্যি ধান কাটতে আসছে; কোন সেলফি কিংবা পত্রিকার জন্য নয়……
কিন্তু কে দিবে এসব কর্মসূচী; কে মেটাবে কৃষকের আশা-আকাঙ্ক্ষা? কে দিবে কৃষকের শ্রমের মূল্য? কৃষকরা কবে ফিরবে বাজার থেকে হাসি মুখে?
জনগনের আশা-আকাঙ্খার বাংলাদেশ আদৌও কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে?
যদি এমন হিম্মত-সাহস-সদিচ্ছা কোন ব্যক্তি/দল/গোষ্ঠীর থাকে, তবেই এগিয়ে আসবে বাংলাদেশ….
লেখক:সাংবাদিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক , শাপলা টিভি।
Leave a Reply